Summary
সততা ও এর গুণাবলী:
সততা মানে সাধুতা, মানবতা ও সত্যবাদিতা। এটি নিজস্ব স্বার্থের চেয়ে অপরের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সত্য কথা বলা। সততা থাকা ব্যক্তিকে সৎ বলা হয়, যারা ন্যায়নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে।
সততার গুরুত্ব:
- সততা মানুষকে ভালো কাজের দিকে পরিচালিত করে, যা জান্নাতে পৌঁছে দেয়।
- সততার অভাবে সমাজে অশান্তি ও বদনাম সৃষ্টি হয়।
- সত্যবাদী ব্যক্তিরা সমাজে সম্মানিত হন, কিন্তু অসত্য সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
হযরত ওমরের সততার উদাহরণ:
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) নিজের সমাজের জন্য ন্যায় বিচার করতেন এবং সাধারণ মানুষের খোঁজখবর রাখতেন। তিনি একদিন একটি দরিদ্র মায়ের ও তার মেয়ের কথোপকথন শুনে মুগ্ধ হন, যেখানে মেয়ে মায়ের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে সতর্কতা দেয়। হযরত ওমর (রা) পরে মেয়েটির সততার জন্য তাকে বিয়ে দেন।
নবী মুহাম্মদ (স)-এর সততা:
নবী মুহাম্মদ (স)-এর চরিত্রেও সততা পরিপূর্ণ ছিল, যার ফলে তাঁর শত্রুরাও তাঁকে শ্রদ্ধা করতো। তিনি হিজরতের সময় অন্যদের সম্পদ আত্মসাৎ করেননি।
শিক্ষণীয় কাজ:
শিক্ষার্থীরা খাতায় সততা কী, তা সুন্দরভাবে লিখবে।
সততা মানে সাধুতা, মানবতা, সত্যবাদিতা। নিজের স্বার্থ বড় করে না দেখা এবং অপরের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হোক তা না চাওয়ার নামই সততা। যার মধ্যে এই মহৎ গুণটি রয়েছে, তাকে সৎ ব্যক্তি বলা হয়। যার মধ্যে সততা আছে, সে ন্যায়নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে। তার মধ্যে মানবতাবোধ থাকবে। সে সর্বদা সত্য কথা বলবে এবং মানুষের বিশ্বাস অর্জন করবে। এমনকি তার চরম শত্রুরাও তাকে বিশ্বাস করবে। সততা মানুষকে ভালো কাজের দিকে পরিচালিত করে। আর ভালো কাজ মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। তাই ইসলাম আমাদের কথাবার্তায়, কাজকর্মে ও আচার-আচরণে সততা রক্ষা করার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে।
অপরপক্ষে যে সমাজে সততার অভাব রয়েছে, সেখানে সুখ ও শান্তি নেই । সেখানে অশান্তি আর অশান্তি । সেখানে বদনাম বিরাজ করে। অসত্য এবং সততার অভাব মানুষকে সমাজে হেয় করে তোলে। যে সমাজে সত্যবাদিতা ও সততার অভাব ঘটে সে সমাজ আস্তে আস্তে ধ্বংসের পথে চলে যায়। ধ্বংস হয়ে যায়। প্রতারণা ও দুর্নীতি মে সমাজকে আচ্ছন্ন করে। মহানবি (স) বলেছেন,
অর্থ : সততা ও সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় আর অসত্য ও মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে।
সততা সম্পর্কে আমরা একটি আদর্শ কাহিনি জানব
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন হযরত ওমর (রা)। তিনি তাঁর রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায় বিচার করতেন। কোনো প্রকার অন্যায় কাজ হলে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিতেন। ছোট-বড়, আপন-পর, ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য সমান কিার হতো। বিচারে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব হতো না। তিনি রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে মদিনার অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোজখবর নিতেন। তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতেন।
এক রাতে তিনি মদিনার পথে ঘুরতে ঘুরতে একটি কুঁড়েঘরের কাছে আসলেন। ঐ ঘরে এক দরিদ্র মা ও তার মেয়ে বসবাস করতেন। তিনি মা ও মেয়ের কথাবার্তা শুনতে গেলেন। দুধ বিক্রি করে তাদের সংসার চলত। মা তার মেয়েকে সকালে দুধের সাথে পানি মিশিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়াতে বলল। মেয়েটি তার মায়ের কথা শুনে অনুরোধ করে কাল, মা এটা অন্যায় কাজ। যদি খলিফা এই অন্যায় জানতে পারেন তাহলে কঠিন শাস্তি দিবেন। মা কললেন এ কাজ তো খলিফা বা তাঁর লোকজন দেখতে পারবে না। জানতেও পারবেন না। মেয়েটি তার মাকে কাল খলিফা ওমর বা তাঁর লোকজন এ অন্যায় না দেখতে গেলেও স্বয়ং আল্লাহতো সবকিছু দেখছেন। তাঁর চোখ কেউ ফাঁকি দিতে পারবে না। তিনি সবকিছু দেখেন ও শোনেন।
হযরত ওমর (রা) মা ও মেয়ের এসব কথাবার্তা শুনে বাড়িতে ফিরে গেলেন। তিনি মেয়েটির সততায় খুবই খুশি ও মুগ্ধ হলেন। তিনি তাঁর যোগ্য ও স্নেহের পুত্রের সাথে ঐ দরিদ্র মহিলার সত্যবাদী কন্যার বিয়ে দিলেন। এই মেয়েটিই হলেন খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (র)-এর নানি।
আমাদের মহানবি (স)-এর চরিত্রে এই সততা গুণটি পরিপূর্ণভাবে ছিল। তাঁর চরম শত্রুরাও এই সততার কারণে তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখত। তাঁর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে যেদিন শত্রুরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল সেদিনও তাঁর কাছে বহু লোকের অর্থ-সম্পদ আমানত ছিল। তিনি কারো কোনো অর্থসম্পদ আত্মসাৎ করেননি। নষ্টও করেননি। আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় তিনি আমানতের সব অর্থ-সম্পদ হযরত আলী (রা)-এর কাছে রেখে গিয়েছিলেন। হযরত আলী (রা) সেগুলো নিজ নিজ মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এটাই সততার আদর্শ ও দৃষ্টান্ত ।
পরিকল্পিত কাজ : সততা কাকে বলে, শিক্ষার্থীরা খাতায় সুন্দর করে বুঝিয়ে লিখবে।
Read more